কবুতর পালন

ভূমিকা


অনাদিকাল থেকেই “শান্তির দূত” হিসেবে কবুতর ভারতবর্ষে তথা বাংলার সর্বত্র খ্যাত। কবুতর ‘কপোত’ নামেও পরিচিত। এ জন্য সব সময় বলা হয় “ভালোবাস কপোত কপোতীর মত” কারণ কবুতর অতি শান্তিপ্রিয়। অতি অল্প সময়ে কবুতর বংশ বিস্তার করে। প্রতি ১২ (বার) মাসে প্রায় তের জোড়া বাচ্চা প্রদান করে-যা অতি অল্প সময়ে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাংসের উৎস হিসেবে মানুষের খাদ্য উপকরণের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। হাঁস-মুরগির তুলনায় কবুতরের বাজার মূল্য বেশি এবং কবুতর পালন সর্বক্ষণই লাভজনক। পারিবারিক পর্যায়ে বসত বাড়ির ঘরের আশপাশে অনেকটা অপরিকল্পিত অবস্থায় শুধুমাত্র ছোট একটা খোপে খাদ্য-পানির সরবরাহের মাধ্যমে কবুতর লালিত পালিত হয়ে থাকে। সরিষা দানাসহ অন্যান্য শস্যকণা খেয়ে কবুতর বেঁচে থাকে । তুলনামূলকভাবে কবুতরের রোগবালাই অনেক কম। তবুও পারিবারিক পর্যায়ে কিংবা বৃহৎ পরিসরে বাণিজ্যিক পর্যায়ে লাভজনকভাবে কবুতর পালনের সার্বিক সুবিধার্থে প্রযুক্তিগত কিছু ধারনা দেয়ার প্রয়াসে “কবুতর পালন” শীর্ষক প্রশ্নোত্তর পর্বের উপস্থাপনা করা হলো:


সংশ্লিষ্ট তথ্য


১. এদেশে কখন কবুতর পালন শুরু হয়েছে?

• আদিম কাল হতে এদেশে কবুতর পালন শুরু হয়েছে।

২. আদিম কালে কি জন্য কবুতর পোষা হতো?

• দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করা হতো। প্রত্র প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংস হিসাবে ব্যবহৃত হতো। শান্তির প্রতীক হিসাবে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্ভোধনে কবুতর উড়ানো হয়। কবুতর আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটায় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

৩. কবুতরের লক্ষণীয় গুণাবলী কি?

• কবুতর নিরীহ, শান্ত এবং সহজেই পোষ মানে।

৪. কবুতর পালনের সুবিধা কি কি?

• অল্প স্থান ও কম খরচে কবুতর পালন করা যায়। কবুতর ছয় মাসে ডিম দেয়, বার মাসে তের জোড়া বাচ্চা দেয়, ১৮ দিনে বাচ্চা ফুটে, চার সপ্তাহে বাচ্চা খাওয়া যায়, বাচ্চা সুস্বাদু ও পুষ্টকর, খনিজ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ, খাদ্য খরচ কম, রোগ-বালাই নেই ও কবুতর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।

৫. পৃথিবীতে কত জাতের কবুতর আছে?

• প্রায় ৬০০ জাতের কবুতর আছে।

৬. কি কি উদ্দ্যেশ্যে কবুতর পালা হয়?

• মাংস উৎপাদন ও বিনোদনের জন্য কবুতর পালা হয়।

৭. বাংলাদেশে কবুতরের জাতের নাম কি কি?

• জালালী, শিরাজী, গিরিবাজ, সোলা, লোটন, সিলভার কিং ও হোয়াইট কিং ইত্যাদি।

৮. কবুতরের ঘর কোথায় এবং কিসে তৈরি হয়?

• টিন বা খড়ের চালার ঘরের কার্নিশে মাটির হাড়ি বা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালা হয়। কাঠের তৈরি ছোট খোপ করে কবুতর পালা যায়।

৯. কবুতরের বংশ বিস্তার কি ধরণের?

• কয়েক জোড়া কবুতর থেকে অনেক জোড়া কবুতর হতে পারে।

১০. কবুতরের খামার কোথায় হওয়া দরকার?

• উঁচু, শুষ্ক ও সমতল জায়গায়।

১১. ঘরের উচ্চতা কি রকম হওয়া উচিত?

• বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত অন্যান্য প্রাণি যাতে আক্রমণ করতে না পারে তার জন্য বাঁশ বা খুঁটি দিয়ে উঁচু জায়গায় কবুতরের ঘর রাখতে হয়।

১২. ঘরের আয়তন কতটুকু হওয়া দরকার?

• প্রতি জোড়া কবুতরের ঘরের জন্য একটি খোপ আবশ্যক।

১৩. এক জোড়া কবুতরের ঘরের জন্য কতটুকু জায়গা দরকার?

• (৩০×৩০×৩০) সে.মি. হওয়া দরকার।

১৪. কবুতরের ঘরের ব্যবস্থাপনা কি রকম হওয়া দরকার?

• অনেকটা মুরগীর বাচ্চা বা কোয়েলের ঘরের ব্যবস্থাপনার অনুরূপ হতে পারে।

১৫. কবুতরের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য্ কি কি?

• কবুতর জোড়ায় জোড়ায় আজীবন একসাথে বাস করে, স্ত্রী ও পুরুষ একসাথে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটায় এবং দানা-পানি দিয়ে ১৮ দিনে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটায়। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়েই মুখে একজাতীয় দুধ উৎপাদন করে বাচ্চাকে খাওয়ায়।

১৬. কতদিনে বাচ্চা পূর্ণতা পায়?

• কবুতরের বাচ্চা ২৬-২৮ দিনে পূর্ণতা পায়।

১৭. কবুতরের জীবনকাল কত বছর?

• প্রায় ১৫ বছর।

১৮. কবুতরের খাবার কি কি হতে পারে?

• দৈহিক বৃদ্ধি ও ডিম প্রদানের জন্য সব শস্য-কণা খাওয়ানো যায় তবে সরিষা কবুতরের খুব পছন্দনীয়।

১৯. প্রতিটি কবুতর প্রতিদিন কতটুকু খাবার খায়?

• প্রায় ৩৫-৬০ গ্রাম।

২০. কবুতরের খাদ্যের পুষ্টিমাণ কিরকম হওয়া দরকার?

• প্রায় ডিমপাড়া মুরগীর মতই (১৫-১৬% আমিষসহ ঝিনুকের গুঁড়া, চুনাপাথর, কাঠ কয়লা ও হাড়ের গুঁড়া হতে পারে)।

২১. কবুতরের বাচ্চাকে কি কি খাদ্য খাওয়ানো হয়?

• প্রথম ৫-৭ দিন দুধ খাওয়াতে হয়। খাদ্যথলিতে সৃষ্ট হরমোনের প্রভাবে কবুতরের দুধ (পিজিয়ন মিল্ক) সে তার বাচ্চাকে খাইয়ে দেয় ।

২২. কতদিন বয়সে বাচ্চারা নিজেদের খাদ্য খেতে পারে?

• দশদিন বয়সে।

২৩. কবুতর তাদের বাচ্চাকে কত দিন খাবার খাওয়ায়?

• বাচ্চা নিজের খাদ্য নিজে সংগ্রহ না-করা পর্যন্ত কবুতর তাদের বাচ্চাকে খাবার খাওয়ায়।

২৪. কবুতরের পানি কিভাবে সরবরাহ হরা হয়?

• কবুতরের কাছাকাছি গামলায় পানি রাখতে হয় যাতে তৃষ্ঞায় নিজেরাই পানি পান করতে পারে।

২৫. কবুতরের কি কি রোগ হয়?

• হাঁস-মুরগীর প্রায় সব রোগই কবুতরের হতে পারে।

<