ছাগল পালন

ভূমিকা


সর্বাধিক জনশ্রুত সনাতন প্রবাদ থেকে আজ অবধি ধারণা করা হয় যে, ছাগল সব ধরণের খাদ্য সামগ্রী খেয়ে জীবণ ধারণ করতে পারে। আধুনিককালে গবেষণা কর্মকান্ড আর বাস্তব নিরীক্ষার তথ্যভিত্তিক পালন ব্যবস্থার প্রয়োগযোগ্য ফলাফল থেকে প্রমাণিত যে, ছাগল নিজের সুস্বাস্থ্য রক্ষা, বেঁচে থাকার প্রবণতা আর মুখরুচির বোধশক্তি অনুসারে সব সময় সব ধরণের (প্রচলিত বা অপ্রচলিত) বস্তুসামগ্রী (দানাদার, অদানাদার, লতাগুল্ম, বিষাক্ত, রসালো, শুকনা ইত্যাদি) আহারের বস্তু হিসেবে সচরাচর গ্রহণ করেনা। একইভাবে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থানগত অস্বাস্থ্যকর বাসস্থানে অরুচিকর সমগ্রী গ্রহণ করে সুস্বাস্থ্যের অভাবে জীবণ ধারণ, বাচ্চাপ্রদান, দুগ্ধদান এবং বংশবিস্থার করতে পারেনা। সহজপ্রাপ্য খাদ্য সমগ্রী সরবরাহ সাপেক্ষে স্বল্প খাদ্য খরচ, আবহাওয়া উপযোগী অতি সাধারণ বাসস্থান, অবিবেচ্য অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অধিক হারে বাচ্চা প্রদান, মুক্ত অথবা ছেড়ে-খাওয়ানো পদ্দতিতে লাভজনকভাবে দেশী-বিদেশী সকল জাতের ছাগল পালন করা যেতে পারে। অতি সামান্য খরচে সাধারণ বিধবা কিংবা সধবা মহিলাদের দ্বারা লাভজনকভাবে ছাগল পালন সম্ভব বিধায় ছাগলকে বিধবার গাভী বলা হয়। উপরোক্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি মুখ্য বিবেচনায় রেখে ফলপ্রসু লাভজনক ছাগল পালন-বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য নিম্নে সংযুক্ত করা হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট তথ্য


১. ছাগল পালনের উপকারিতা কি কি?

• মাংস ও চামড়া উৎপাদন, পারিবারিক আয় বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন সামগ্রীতে ব্যবহার এবং দারিদ্র বিমোচনের জন্য ছাগল পালন করা হয়।

২. আমাদের দেশে কি ধরণের ছাগল পালন করা হয়?

• আমাদের দেশে স্থানীয় কালো জাতের ছাগল সর্বত্র পালন করা হয়।

৩. দেশীয় কালো ছাগল ছাড়া আর কোন কোন জাতের ছাগল পালন করা হয়?

• বোয়ের,সুদানিজ,ডেসার্ট, বারবারি, যমুনাপাড়ি এবং আরও কয়েক জাতের ছাগল বাংলাদেশে পালন করা হয়।

৪. দেশীয় কালো ছাগল কি জন্যে পালন করা হয়?

• বিশ্ববিখ্যাত চামড়া উৎপাদনের জন্য।

৫. দেশীয় কালো ছাগলের ওজন কত কেজি হতে পারে?

• দেশীয় কালো ছাগলের ওজন ১৫-২০ কেজি হতে পারে।

৬. প্রতিদিন ছাগলের ওজন কত বাড়তে পারে?

• ছাগলের ওজন প্রতিদিন ২০ থেকে ৪৫ গ্রাম বাড়তে পারে।

৭. আমাদের দেশীয় ছাগলের বিশেষ গুণ কি?

• আমাদের দেশীয় ছাগলের চামড়া ভাল এবং এটি অপেক্ষাকৃত অধিক হারে বাচ্চা দেয়।

৮. দেশীয় ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশি হয় কেন?

• অল্প দুধ এবং বেশি বাচ্চা দেয় বিধায় দুধের অভাবে বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশি হয়।

৯. দেশীয় ছাগল কতটুকু দুধ দেয়?

• সর্বোচ্চ ১.৫ কেজি দুধ দেয়।

১০. বিদেশী ছাগল কতটুকু দুধ দেয়?

• প্রায় ২.৫ কেজি দুধ দেয়।

১১. একটি পাঁঠা দ্বারা কতগুলো ছাগীকে পাল দেয়া যেতে পারে?

• একটি পাঁঠা দ্বারা ১০-১২ টি ছাগীকে পাল দেয়া যেতে পারে।

১২. পারিবারিক পর্যায়ে কয়টি ছাগল পালা সুবিধাজনক?

• পারিবারিকভাবে ১০-১২ টি ছাগল পালা সুবিধাজনক।

১৩. বসত বাড়ীর আঙ্গিনায় অতিরিক্ত খাদ্য সরবরাহ ছাড়া কয়টি ছাগল পালা যাবে?

• প্রায় ৫-৬টি ছাগল পালা যাবে।

১৪. কত বয়সে ছাগল বিক্রি করা যায়?

• খাসী ৮-১২ মাসের মধ্যে এবং পাঠী ৬-৭ মাসের মধ্যে বিক্রি করা যায়।

১৫. দেশীয় ছাগল সাধারনত সর্বোচ্চ কতটি বাচ্চা দিতে পারে?

• দেশীয় ছাগল ৫-৬টি বাচ্চা দিতে পারে।

১৬. ছাগলের ঘরের পরিবেশ কেমন হতে হবে?

• পরিষ্কার, শুষ্ক, দূর্গন্ধমুক্ত, উষ্ণ ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

১৭. কোন পরিবেশ ছাগলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

• গোবরযুক্ত, স্যাঁতস্যাঁতে, অন্ধকার ও দূর্গন্ধকর পরিবেশ।

১৮. সাধারণত ছাগলের কি কি রোগ হয়?

• নিউমোনিয়া, একযাইমা, চর্মরোগ, পাতলা পায়খানা, পরজীবি এবং খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

১৯. রোগ হলে ছাগলের কি কি ক্ষতি হয়?

• ওজন কমে যায, পেটের বাচ্চা পড়ে যায়, চামড়ার গুণ নষ্ট হয় ও বাচ্চা দেয়া কমে যায়।

২০. কি কি পদ্ধতিতে ছাগল পালা যায়?

• ছেড়ে দিয়ে, ঘরে রেখে এবং ঘরে ও বাইরে উভয় অবস্থাতেই পালা যায়।

২১. ছাগলের জন্য কতটুকু জায়গা লাগে?

• প্রতিটি বড় ও বয়স্ক ছাগলের জন্য ৮-১০ ব.ফুট এবং প্রতিটি বাড়ন্ত বাচ্চা ছাগলের জন্য ৪-৫ ব.ফুট।

২২. ছাগলের ঘর কি কি জিনিস দ্বারা বানানো যায়?

• ছন, গোলপাতা, খড় ও বাঁশ দ্বারা ছাগলের ঘর বানানো যায়। আর্থিক অবস্থায় কুলালে পলিথিন ব্যবহার করা যায়।

২৩. ছাগলের শীত নিবারণ কিভাবে করা যায়?

• ঘরের বেড়ার সাথে চট দেয়া যেতে পারে।

২৪. ছাগল কি কি খাবার খায়?

• ছাগল লতাপাতাসহ সব প্রকার খাবার খায়। ছাগলের খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

২৫. বাচ্চা প্রসবের পরে ছাগলের বাচ্চাকে কি ধরণের খাবার দেয়া উচিৎ?

• প্রথম তিন দিন শালদুধ এবং গাভীর সাধারণ দুধ ছাগলের বাচ্চাকে খেতে দেয়া উচিত।

২৬. শালদুধ কি?

• বাচ্চা প্রসবের আগে ও পরের তিন দিনের দুধকে শালদুধ বলে।

২৭. ছাগলের সাধারণ দুধ ও শালদুধ পানের পার্থক্য কি?

• শালদুধে পুষ্টি ও খাদ্যগুণ বেশি থাকে।

২৮. সদ্যজাত বাচ্চার ওজন কত কেজি?

• ৮০০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি।

২৯. জন্মের পরপরই কি খাওয়াতে হবে?

• নাক ও শরীরের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে শালদুধ খাওয়াতে হবে।

৩০. কি পরিমাণ শালদুধ ছাগলের বাচ্চাকে খাওয়ানো হবে?

• প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম শালদুধ খাওয়াতে হবে।

৩১. শালদুধ দিনে কতবার খাওয়াতে হবে?

• দিনে ৮-১০ বার খাওয়াতে হবে।

৩২. দেরীতে খাওয়ালে শালদুধের কি ক্ষতি হয়?

• শালদুধ জমে যায়।

৩৩. শালদুধ খাওয়ানোর উপকারিতা কি?

• শালদুধে ছাগলের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩৪. প্রতি ছাগলের শালদুধ থেকে কয়টি বাচ্চাকে খাওয়ানো সুবিধাজনক?

• দুটি বাচ্চাকে খাওয়ানো উত্তম।

৩৫. বেশি বাচ্চা হলে কি কি খাওয়াতে হবে?

• গাভীর দুধ ও ভাতের মাড় খাওয়ানো যেতে পারে।

৩৬. কত বয়সের বাচ্চাকে ঘাস খাওয়ানোর অভ্যাস করানো যেতে পারে?

• প্রথম সপ্তাহের পরপরই বাচ্চাকে ঘাস খাওয়ানোর অভ্যাস করানো দরকার।

৩৭. ঘাস খাওয়ার অভ্যাস করতে কতদিন সময় লাগবে?

• প্রায় ২৫-৩০ দিন।

৩৮. কি কি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে?

• কচি ঘাস, দূর্বা, সেচি, আরাইল্যা, মাশকালাই, খেসারী আর উন্নত কচি ঘাস হিসাবে নেপিয়ার, রোজি, প্লিকাটুলাম, এন্ড্রোপোগন, সেন্ট্রোসোমা ইত্যাদি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে।

৩৯. বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছাগলকে কি পরিমাণ খাবার খাওয়াতে হবে?

• এক সপ্তাহ থেকে বার সপ্তাহ পর্যন্ত ২০০ গ্রাম থেকে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫০ গ্রাম ছাগলের দুধ খাওয়াতে হবে।

৪০. ভাতের মাড় কি পরিমাণে খাওয়াতে হবে?

• দুই থেকে চার সপ্তাহে দুধের সাথে সামান্য পরিমাণে ভাতের মাড় এবং পাঁচ থেকে বার সপ্তাহের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত বাড়াতে হবে।

৪১. কচি ঘাস কি পরিমাণে খাওয়াতে হবে?

• দুই থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত সামান্য পরিমাণে এবং পরবর্তীতে বার সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে কচি ঘাস খাওয়াতে হবে।

৪২. জন্মের পর বাচ্চার নাভী কিভাবে কাটতে হবে?

• চামড়ার কাছ থেকে ৫-৭ সে.মি. রেখে কাটতে হবে।

৪৩. শালদুধ কিভাবে খাওয়াতে হবে?

• ছোট ফিডার বোতলে শালদুধ ভরে ছাগলকে খাওয়াতে হবে।

৪৪. দুধের তাপমাত্রা কত ডিগ্রী থাকতে হবে?

• দুধের তাপমাত্রা ৩৮-৩৯ ডিগ্রী সে. থাকতে হবে।

৪৫. বাচ্চার ঘরের তাপমাত্রা কত ডিগ্রী থাকতে হবে?

• বাচ্চার ঘরের তাপমাত্রা ২৫-২৮ ডিগ্রী সে. থাকতে হবে।

৪৬. অতিরিক্ত দুধ খাওয়ালে কি ক্ষতি হবে?

• ছাগলের বাচ্চার পাতলা পায়খানা হতে পারে।

৪৭. দেশীয় ছাগলের বাচ্চার ওজন সাধারণত কোন বয়সে বেশি বাড়ে?

• দেশীয় ছাগলের বাচ্চার ওজন ৩-১২ সপ্তাহ বয়সে বেশি বাড়ে।

৪৮. ছাগলের বাচ্চাকে সাধারণত কখন খাসী করানো হয়?

• ছাগলের বাচ্চাকে ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে খাসী করানো হয়।

৪৯. কোন পদ্ধতিতে খাসী করানো হয়?

• দেশীয় পদ্ধতিতে অন্ডকোষ বের করে ফেলা হয়।

৫০. খাসী করানোর সময় কি ধরণের সতর্কতা গ্রহণ করতে হয়?

• অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা খাসী করাতে হবে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে ভালো জীবাণুনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৫১. সব বয়সের ছাগলের খাবার এক ধরণের হবে কি?

• না, প্রজনন ও মাংস-প্রদানকারী ছাগলের জন্য নিয়মমাফিক আলাদা আলাদা খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

৫২. কোন সময়ে বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশি হয়?

• প্রসবের সাথে সাথে এবং দুধ ছাড়ার পর থেকে পাঁচ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।

৫৩. কি কি কারণে মৃত্যুর হার বাড়ে?

• খাদ্যে আমিষ ও বিপাকীয় শক্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ায় পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।

৫৪. শুষ্ক খাবার কি হারে দেয়া উচিৎ?

• শরীরের ওজনের ৪-৫% হারে শুষ্ক পদার্থ দেয়া উচিৎ।

৫৫. দানাদার খাদ্য কোন নিয়মে খাওয়াতে হবে?

• দুই মাস বয়সে ১০০ গ্রাম হিসাবে প্রতি মাসে ৫০ গ্রাম বাড়াতে হবে এক বছর পর্যন্ত।

৫৬. কোন নিয়মে ঘাস-পাতা খাওয়াতে হবে?

• দ্বিতীয় মাসে ৪০০ গ্রাম হিসাবে আস্তে আস্তে বাড়িয়ে এক বৎসর বয়সে ৩.৫ কেজি পর্যন্ত সরবরাহ করতে হবে।

৫৭. দৈহিক ওজনের তুলনায় দুগ্ধবতী ছাগী কি পরিমাণ খাবার খায়?

• শরীরের ওজনের ৫-৬% হারে খাবার খায়।

৫৮. তিন বছর বয়সে একটি ছাগীর ওজন কত কেজি হয়?

• তিন বছর বয়সে একটি ছাগীর ওজন প্রায় ২০-২৫ কেজি হয়।

৫৯. এই সময় একটি ছাগী কতটুকু খাবার খায়?

• দৈনিক প্রায় ১.৫ কেজি খাবার খায়।

৬০. প্রতিদিন একটি ছাগী সাধারণত কত লিটার দুধ দেয়?

• প্রতিদিন একটি ছাগী সাধারণত ৪০০ মি.লি. থেকে ১ লি. দুধ দেয়।

৬১. বাচ্চা দেওয়ার কতদিন পর ছাগল গরম হয়?

• বাচ্চা দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর ছাগল গরম হয়।

৬২. ছাগী বছরে কতবার বাচ্চা দেয়?

• ছাগী বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়।

৬৩. জন্মের পর বাচ্চার গড় ওজন কতটুকু হয়?

• ১.২৫ কেজি।

৬৪. ছাগলকে দানাদার খাদ্য কি পরিমাণে দিতে হবে?

• গম, ভূট্টা, ভাঙ্গাঁ-চাল ১২%, গমের ভূষি ও কুঁড়া ৪৭%, যেকোন ভূষি ১৬%, খৈল ২১.৫%, খনিজ ২%, লবণ ১% এবং খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ ০.৫% ।

৬৫. দশটি ছাগলের জন্য প্রতিদিন মোট কত কেজি ঘাসের প্রয়োজন হয়?

• প্রায় ১৩ কেজি।

৬৬. ছাগলকে ইউরিয়া সার খাওয়ানো যায় কি?

• হ্যাঁ, খড়:ইউরিয়া:চিটাগুড =৮২%+৩%+১৫% হারে খাওয়াতে হবে।

৬৭. ছাগলকে সরাসরি চিটাগুড় খাওয়ানো যাবে কি?

• ছাগলকে সরাসরি চিটাগুড় খাওয়ানো যাবে না কারণ পাতলা পায়খানা বা বিষক্রিয়া দেখা দিবে।

৬৮. ঘাস বা খড়ের টুকরা আকারে কি রকম হতে হবে?

• খড়ের টুকরা ১.৫-২.০ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে।

৬৯. একটি ছাগী কোন বয়সে যৌবনপ্রাপ্ত হয়?

• পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সে।

৭০. কত মাস বয়সে ছাগীকে পাল দেয়া হয়?

• সাত থেকে আট মাস বয়সে।

৭১. যৌবনপ্রাপ্ত বয়সে ছাগীর ওজন সাধারণত কত হয়?

• প্রায় ১২-১৩ কেজি।

৭২. প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগীর গরম হওয়ার লক্ষণগুলো কি কি?

• যোনীতে শ্লেষ্মা নির্গত হয়, ঘন ঘন অস্বাভাবিক ডাকাডাকি করে ও অন্য ছাগীর উপর উঠানামা করে।

৭৩. পাল দেয়ার সঠিক সময় কোনটি?

• গরম হওয়ার ১২-৩৬ ঘন্টা পরে।

৭৪. দিনে কোন সময় পাল দিতে হবে?

• আবহাওয়া সকালে গরম হলে বিকালে আর বিকালে গরম হলে সকালে।

৭৫. ছাগলের সাধারণ রোগের প্রতিরোধের জন্য কি ব্যবস্থা নিতে হবে?

• টিকা ও কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে ও পশু-চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৭৬. ছাগলের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ কোনগুলো?

• পিপিআর ও গোট-পক্স।

৭৭. বছরে কতবার ছাগলকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে?

• দুই বার।

৭৮. কোন্ কোন্ সময়ে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে?

• এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে।

৭৯. বর্তমানে কি কি কৃমিনাশক খাওয়ানো ভালো?

• যে কোন সহজ প্রাপ্য, সস্তা, ও ফলপ্রসু কৃমিনাশক খাওয়ানো যেতে পারে।

৮০. চর্মরোগ দেখা দিলে কি করতে হবে?

• ছাগলকে খামার থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ দিন আলাদা করে ফেলতে হবে।

৮১. পাঁঠার এবং ছাগীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা কি একই ধরণের?

• প্রায় একই প্রকার।

৮২. প্রজননের উপযোগী পাঁঠাকে বিশেষ কি খাদ্য দিতে হয়?

• দশ গ্রাম গজানো ছোলা।

৮৩. প্রয়োজনীয় মাত্রায় ছোলা কেন খাওয়ানো হয়?

• আমিষ সরবরাহের জন্য।

৮৪. পাঠী কত বয়স পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে?

• ১০-৩৬ মাস পর্যন্ত।

৮৫. পাঁঠার শরীরের চর্বি কমানো যাবে কিভাবে?

• আটাশ থেকে ত্রিশ কেজি ওজনের পাঁঠার জন্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে।

৮৬. কত মাস বয়সে পাঁঠা যৌবনপ্রাপ্ত হয়?

• চার থেকে পাঁচ মাস বয়সে।

৮৭. কত মাস বয়সে পাঁঠাকে প্রজনন কাজে ব্যবহার করা যায়?

• আট থেকে নয় মাস বয়সে।

৮৮. একটি পাঁঠা কয়টি ছাগীর প্রজননের জন্য উপযোগী?

• দশটি ছাগীর জন্য।

৮৯. একটি পাঠাকে সপ্তাহে কতবার প্রজনন কাজে ব্যবহার করা যায়?

• সাত থেকে দশবারের বেশি নয়।

৯০. কত মাস বয়সে খাসী ও পাঁঠাকে বাজারজাত করা যাবে?

• যথাক্রমে ছয় থেকে সাত মাস ও বার মাসের মধ্যে।

৯১. ছেড়ে-খাওয়া পদ্ধতি ছাড়া ঘরে ছাগল পালন করা যাবে কি?

• হ্যাঁ, পরিমিত বাসস্থান, সুষম খাদ্য ও রোগমুক্ত পরিবেশে আবদ্ধ-অবস্থায় ঘরে ছাগল পালা যায়।

৯২. খামার করার জন্য কত মাস বয়সের ছাগী ও পাঁঠা সংগ্রহ করা দরকার?

• ছয় থেকে পনের মাস বয়সী ছাগী ও পাঁঠা সংগ্রহ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে পাঠীর বয়স ৫-৭ মাস হতে পারে।

৯৩. স্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন বলতে কি বুঝায়?

• ঘরে রেখে আবদ্ধ ব্যবস্থাপনায় ছাগল পালনকে স্টল ফিডিং বলে।

৯৪. বয়স্ক একটি ছাগলের জন্য কতটুকু জায়গার দরকার?

• বয়স্ক একটি ছাগলের জন্য ৭-১০ বর্গফুট জায়গার দরকার।

৯৫. ছাগল সম্পূর্ণ আবদ্ধ-অবস্থায় রাখলে কি ক্ষতি হয়?

• ছাগল পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত হয়।

৯৬. কত ঘন্টা ছাগলকে বাহিরে রাখতে হবে?

• দিনে ৬-৮ ঘন্টা।

৯৭. কিভাবে সম্পূর্ণ আবদ্ধ-অবস্থায় ছাগলকে ঘরে পালা যাবে?

• পর্যাপ্ত ঘাস ও দানাদার খাদ্য সরবরাহ করে ছাগলকে আস্তে আস্তে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করতে হবে।

৯৮. ছাগলকে কী পরিমাণ আঁশ-জাতীয় খাদ্য দিতে হবে?

• মোট খাবারের ৬০-৮০%।

৯৯. ছাগলের আঁশ-জাতীয় খাদ্য বলতে কি বুঝায়?

• ঘাস, লতা, পাতা ও খড় ইত্যাদি।

১০০. ছাগলের দানাদার খাদ্য বলতে কোন কোন খাদ্যকে বুঝায়?

• কুঁড়া, ভূষি, চাল ও ডাল ইত্যাদি।

১০১. সাধারণ অবস্থায় ছাগল কি পরিমাণ খাবার খায়?

• দৈহিক ওজনের ৪-৫ শতাংশ।

১০২. ব্লাক বেঙ্গল ছাগল আমাদের দেশে ভালভাবে বাঁচতে পারে কেন?

• এদেশের আবহাওয়া ও খাদ্য-সামগ্রী ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জন্য খুবই উপযোগী।

১০৩. পালের সব ছাগলকে এক সাথে রাখা ঠিক হবে কি?

• পালের সব ছাগলকে এক সাথে রাখা ঠিক হবে না তবে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সঠিক ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করে দুগ্ধবতী, গর্ভবতী ও শুষ্ক ছাগলকে এক সাথে রাখা যেতে পারে।

১০৪. প্রসবের পর কতদিন বাচ্চাকে ছাগীর সাথে রাখতে হবে?

• সাত দিন পর বাচ্চাকে ছাগীর সাথে রাখতে হবে।

১০৫. বছরের কোন সময় বাচ্চাকে আলাদা অবস্থায় রাখা উচিৎ?

• শীতকালে।

১০৬. এ ধরণের পালন পদ্ধতিকে কি বলে?

• ব্রুডিং পেন পদ্ধতি বলে।

১০৭. ব্রুডিং পেন পদ্ধতি বলতে কি বুঝায়?

• পরিমিত জায়গায় এবং তাপমাত্রায় বাচ্চাকে যে খাঁচায় রাখা হয় তাকে ব্রুডিং পেন বলে।

১০৮. ব্রুডিং পেনের আয়তন কত?

• (২×২×২) ঘণফুট আয়তনে দুটি ছাগী ও সর্বোচ্চ ছয়টি বাচ্চা রাখা ভালো হবে।

১০৯. ব্রুডিং পেনে কিভাবে পরিমিত তাপমাত্রা রক্ষা করা হয়?

• ১৫ ডিগ্রি সে.- এর নিচে নামলে খাঁচায় ১০০ ওয়াটের একটি বাল্ব জ্বালাতে হবে।

১১০. ছাগীকে গরীবের গাভী বলা হয় কেন?

• মাত্র কয়েকটি ছাগল থেকে একজন খামারী বা মহিলা সংসারের ব্যয়ভার মেটাতে পারেন বলে।

১১১. ছাগলের দুধ অন্যান্য দুধের তুলনায় পাতলা হয় কেন?

• অপেক্ষাকৃত বেশি পানি এবং কম চর্বি থাকে বিধায়।

১১২. ছাগলের দুধে বিশেষ কোন গুণ আছে কি?

• ঔষধী গুণ আছে বিশেষ করে গ্যাসট্রিক আলছার রোগীর জন্য ছাগলের দুধ বেশ উপকারী।

১১৩. পাঁঠার শরীরে খারাপ গন্ধ থাকে কেন?

• পাঁঠার শরীরে এবং ঘামে ক্যাপরোয়িক এসিড আছে যা প্রজননের মাধ্যমে ছাগীর শরীরে যায় এবং দুধের সাথে বের হয়।

১১৪. ছাগলের মল কি কাজে লাগে?

• ছাগলের মল জমির সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

১১৫. ছাগলের গায়ে চর্মরোগ দেখা দিলে কি করতে হবে? • সুস্থ ছাগল থেকে আক্রান্ত ছাগলকে আলাদা রাখতে হবে এবং ১৫-৩০ দিন পরপর ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে ছাগলকে ডুবাতে হবে।

১১৬. ছাগলের বাচ্চার ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া হলে কি করতে হবে?
• মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিচ্ছন্ন জায়গায় রেখে পরিমিত পরিমাণ দুধ এবং স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

১১৭. দুধের পরিবর্তে ছাগলের বাচ্চাকে কি খাওয়ানো যেতে পারে?

• ফিডারের সাহায্যে ভাতের মাড় খাওয়ানো যেতে পারে।

১১৮. ছাগলের চামড়ার গুণগত মান কিভাবে রক্ষা করা যায়?

• চর্মরোগ-মুক্ত রেখে নিয়মমত জবাই করে সাবধানে চামড়া ছাড়ানোর পর খুব তাড়াতাড়ি বিক্রি করতে হবে।

১১৯. ছাগলের মাংসে কি কি গুণ আছে?

• কম-বেশি মাত্রায় প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টিগুণই বিদ্যমান।

১২০. দেশী ছাগলের খামার শুরু করতে কি কি সমস্যা হতে পারে?

• দেশী ছাগলের প্রকৃত জাতের অভাব, সস্তা দামের সুষম খাদ্যের অভাব, চারণ-ভূমির স্বল্পতা ও জৈব-নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি।