ঘাস উৎপাদন

ভূমিকা


আধুনিক পশু পালনের জন্য মোট ব্যবস্থাপনা খরচের ৬৫-৭০ শতা্ংশ খাদ্য খাতে খরচ হয়ে থাকে । তাই পশু পালনের সর্বক্ষেত্রেই লাভ-লোকসান নির্ভর করে সাশ্রয়ী মূল্যের খাদ্য সরবরাহের উপর। আরও উল্লেখ্য যে, পশুর দৈহিক বৃ্দ্ধি এবং আশানুরূপ দুধ-মাংস উৎপাদনের প্রয়াসে রসালো খাদ্য সামগ্রীর গুরুত্ব অনেক। বৎসর-ব্যাপী এই ফডার খাদ্য-সামগ্রী (বিশেষ ধরনের কাঁচা ঘাস) সব ঋতুতে সম পরিমানে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। আর চলমান ঘাস উৎপাদন ছাড়া ক্রমাগত হ্রাসকৃত চারণ-ভূমির প্রাকৃতিক ঘাস খাইয়ে পশুর পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এসব কারণে অধিক ফলনশীল দেশী-বিদেশী উন্নত ঘাস চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায়, ঘাস উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির উপরে যথাযথ প্রযুক্তি প্রয়োগের প্রয়াসে “ঘাস উৎপাদন” শীর্ষক পর্বে আলোকপাত করা হলো:


সংশ্লিষ্ট তথ্য


১. বর্তমানে উচ্চফলনশীল ঘাস উৎপাদনের প্রয়োজন কি?

• অতীতে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক চারণভূমি ছিল যেখানে গরু বাছুর চড়ানো যেতো। বর্তমানে চারণভূমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বর্ধিত হারে দুধ মাংস উৎপাদনের স্বার্থে গবাদি পশুপালনের প্রয়োজনে বর্তমানে উচ্চফলনশীল আধুনিক সবুজ ঘাসের আবাদ করা প্রয়োজন।

২. বর্ষজীবি বা বহুবর্ষী ঘাস বলতে কোন জাতের ঘাসকে বুঝায়?

•যে সব ঘাস একবার আবাদ করলে পরবর্তীতে ঐ ঘাস থেকেই বেশ কয়েক বছর ঘাস উৎপাদন করা যায় তাদেরকে বর্ষজীবি বা বহুবর্ষী ঘাস বলা হয়।

৩ আমাদের দেশে বর্তমানে কি কি বহুবর্ষী ঘাস উৎপাদন করা যায়?

•নেপিয়ার, এন্ড্রোপোগন, স্প্লেনডিডা, রোজা, সিগনাল, জাম্বু, পারা ইত্যাদি ঘাস আমাদের দেশে সরকারী এবং বেসরকারী পর্যায়ে আবাদ করা হয়।

৪. উল্লিখিত ঘাসসমূহ কি একই সময়ে আবাদ করা যায়?

•উল্লিখিত ঘাসসমূহের কোনটি একই ঋতুতে আবার কোনটি বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন আবহাওয়ায় ভিন্ন চাষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত হয়।

৫. নেপিয়ার ঘাস বছরের কোন সময়ে চাষ করা যায়?

• বছরের যে কোন সময়ে নেপিয়ার ঘাস আবাদ করা যায় তবে বসন্তকালে (ফাল্গুণ-চৈত্র মাসে) নেপিয়ার ঘাস আবাদ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।

৬. কোন ধরণের জমিতে নেপিয়ার ঘাস আবাদ করা উচিৎ?

• জলাবদ্ধ স্থান ছাড়া বাংলাদেশের সব ধরণের জমিতে এমনকি পাহাড়ী ঢাল এবং সমুদ্র তীরবর্তী লোনা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করা যেতে পারে।

৭. নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য কিভাবে জমি তৈরি করতে হবে?

• আগাছা পরিষ্কার করে রসালো মাটিতে ২-৩ বার চাষ দিয়ে অথবা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর কাদা মাটিতে নেপিয়ার ঘাস লাগানো যেতে পারে।

৮. নেপিয়ার চাষের ক্ষেত্রে কিভাবে কাটিং তৈরি করতে হয়?

• পরিপক্ক ঘাসকে কেটে কমপক্ষে একটি গিটসহ টুকরা করে কাটিং তৈরি করতে হবে।

৯. নেপিয়ার চাষের ক্ষেত্রে কাটিং-এর সংখ্যা কত হওয়া দরকার?

• প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫-২৬ হাজার কাটিং বা মুথা লাগাতে হবে।

১০. নেপিয়ার চাষে কাটিং এবং লাইনের দূরত্ব কত হবে?

• লাইন থেকে লাইন প্রায় ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং প্রায় ৩৫ সে.মি. দূরে হতে হবে।

১১. নেপিয়ার চাষের জমিতে কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হয়?

• জমি তৈরির সময়ে ৫০:৭০:৩০ অনুপাতে যথাক্রমে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

১২. ঘাস লাগানোর পর আবার সার দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

• এক মাস পরে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং-এর পর ও খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর একই মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।

১৩. নেপিয়ার ঘাস চাষে সেচের প্রয়োজন হয় কোন সময়?

• খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর, গ্রীষ্মকালে ঘাস কাটার সময় এক থেকে দেড় মাস পরপর, শীতকালে ৫০-৬০ দিন পরপর (সেচ সুবিধানুযায়ী) নেপিয়ার ঘাস চাষে সেচের প্রয়োজন।

১৪. নেপিয়ার ঘাস বছরে কতবার কাটা যায়?

• প্রথম বছর ৫-৬ বার; ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ বছর ৭-৯ বার কাটা যায়।

১৫. বছরে কী পরিমাণ কাঁচা নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন হতে পারে?

• প্রায় ১৫০-২০০ টন কাঁচা নেপিয়ার ঘাস উৎপাদন হতে পারে যদি চাষের সব ব্যবস্থা সঠিক থাকে।

১৬. প্রতি কেজি কাঁচা নেপিয়ার ঘাসের পুষ্টিমাণ কী রকম হতে পারে?

• শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, আমিষ ২৫ গ্রাম এবং বিপাকীয় শক্তি ২০ মেগা জুল।

১৭. কাঁচা নেপিয়ার ঘাস অনেক দিন পর্যন্ত খাওয়ানোর জন্য কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়?

• সাইলেজ তৈরি করে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গুণাগুণ ঠিক রেখে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

১৮. এন্ড্রোপোগন ঘাস বছরের কোন কোন সময় চাষ করা যায়?

• নেপিয়ার ঘাসের অনুরূপ সময়েই চাষ করা যায়। বছরের যে কোন সময়ে চাষ করা যায় তবে বসন্ত কালে বিশেষ করে ফাল্গুণ-চৈত্র মাসে এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষ করা উত্তম।

১৯. কোন ধরণের মাটিতে এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষ করা যেতে পারে?

• নেপিয়ার ঘাস যে ধরণের মাটিতে চাষ করা যায় ঠিক একই ধরণের মাটি ও স্থানে অনায়াসে চাষ করা যায়, লবণাক্ত ও জলাবদ্ধ স্থান ছাড়া বাংলাদেশের সব ধরণের মাটিতেই এন্ড্রোপোগন ঘাসের চাষ করা যেতে পারে। পাহাড়ের টিলা বা আংশিক ঢালু মাটিতে এ ঘাস ভাল জন্মায় না।

২০. এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষের জন্য জমি কিভাবে তৈরি করতে হবে?

• আগাছা পরিষ্কার করে রসালো মাটিতে বেশ কয়েকবার (২-৩ বার) চাষ করে অথবা বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই কাদা বা পলি মাটিতে এন্ড্রোপোগন ঘাসের মোথা বা কাটিং লাগানো যেতে পারে।

২১. প্রতি হেক্টর জমিতে কত সংখ্যক কাটিং বা মুথা লাগানো যেতে পারে?

• ত্রিশ হাজার মুথা লাগাতে হবে।

২২. এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষের ক্ষেত্রে সার প্রয়োগের নিয়ম কী রকম হতে পারে?

• জমি তৈরির সময় প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার যথাক্রমে ৫০:৭০:৩০ কেজি অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে।

২৩. এন্ড্রোপোগন ঘাস লাগানোর পর কি পরিমাণ সার দিতে হবে?

• ঘাস লাগানোর এক মাস পরে প্রতি হেক্টরে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং-এর পর পরই একই পরিমাণে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

২৪. এন্ড্রোপোগন ঘাসের কাটিং-এর দূরত্ব কতটুকু হতে হবে?

• চারা থেকে চারা ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং ৩৫ সে.মি. দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

২৫. এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষে সেচ দেয়ার প্রয়োজন আছে কি?

• খরা মৌসুমে প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়।

২৬. এন্ড্রোপোগন ঘাস কত বয়সে কাটা যায়?

• গ্রীষ্মকালে ২৫-৩০ দিন বয়সে এবং শীতকালে ৩০-৪০ দিন বয়সে কাটা যেতে পারে (সেচ সুবিধার প্রেক্ষাপটে)।

২৭. এন্ড্রোপোগন ঘাস বছরে কতবার কাটা যায়?

• প্রথম বছর ৭-৯ বার, ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ বছরে ৯-১১ বার কাটা যায়।

২৮. বছরে প্রতি হেক্টর জমি থেকে কি পরিমাণ এন্ড্রোপোগন ঘাস উৎপাদিত হতে পারে?

• প্রতি হেক্টরে ১০০-১৩০ টন।

২৯. এন্ড্রোপোগন ঘাসের পুষ্টিমাণ কি রকম হতে পারে?

•প্রতি কেজিতে শুষ্ক পদার্থ ৩৭০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ৩৩৮ গ্রাম, আমিষ ২২ গ্রাম, আঁশ ১৪৬ গ্রাম, পাচ্যতা ৬৪% এবং বিপাকীয় শক্তি ৩.৭৮ মেগা জুল।

৩০. এন্ড্রোপোগন ঘাস কিভাবে সংরক্ষণ করে অনেক দিন পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে?

• নেপিয়ার ঘাসের অনুরূপে সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যেতে পারে।

৩১. স্প্লেনডিডা ঘাস বছরের কোন কোন সময়ে রোপণ করা যায়?

• বছরের যে কোন সময়ে তবে বসন্ত ঋতুতে বিশেষ করে ফাল্গুণ-চৈত্র মাসে স্প্লেনডিডা ঘাস চাষ করার অতি উত্তম সময়।

৩২. কোন ধরণের জমিতে স্প্লেনডিডা ঘাস আবাদ করা যেতে পারে?

• জলাবদ্ধ, লোনা এবং পাহাড়ি ঢালু জমি ছাড়া বাংলাদেশের সব ধরণের জায়গায় এই ঘাস চাষ করা যেতে পারে।

৩৩. স্প্লেনডিডা ঘাস চাষের জন্য কিভাবে জমি তৈরি করতে হবে?

• নেপিয়ার এবং এন্ড্রোপোগন ঘাস চাষের অনুরূপ জমি তৈরি করে স্প্লেনডিডা ঘাসের মুথা বন্যা পরবর্তী সময়ে লাগাতে হবে।

৩৪. স্প্লেনডিডা ঘাস চাষের ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর জমিতে কাটিং-এর সংখ্যা এবং দূরত্ব কী পরিমাণ হতে হবে?

• প্রতি হেক্টরে ৩০-৪০ হাজার মুথা/কাটিং লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে চারা থেকে চারা ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং-এর দূরত্ব ৩৫ সে.মি. হতে হবে।

৩৫. স্প্লেনডিডা ঘাস আবাদের সময় কী নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে?

• জমি তৈরির সময়ে প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি যথাক্রমে ৫০:৭০:৩০ কেজি অনুপাতে প্রয়োগ করতে হবে।

৩৬. ঘাস লাগানোর পরবর্তী সময়ে কী নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে?

• প্রতি হেক্টরে ঘাস লাগানোর এক মাস পরে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং-এর পরে একই পরিমাণে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩৭. চাষের ক্ষেত্রে বছরের কোন সময়ে পানি সেচ দেয়ার দরকার হয়?

• খরা মৌসুমে প্রতি ১৫-২০ দিন পরপর পানি সেচ দেয়ার দরকার হয়।

৩৮. স্প্লেনডিডা ঘাস বছরে কতবার কাটা যায়?

• গ্রীষ্মকালে প্রতি ২৫-৩০ দিন পরপর এবং শীতকালে সেচের সুবিধা থাকলে প্রতি ৩০-৪০ দিন পরপর স্প্লেনডিডা ঘাস কাটা যায়।

৩৯. বছরে কতবার স্প্লেনডিডা ঘাস কর্তণ করা যায়?

• প্রথম বছরে ৭-৯ বার এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বছরে ৯-১১ বার কর্তণ করা যায়।

৪০. এক বছরে প্রতি হেক্টরে কি পরিমাণ কাঁচা স্প্লেনডিডা ঘাস উৎপাদিত হতে পারে?

• ১০০-১৩০ টন ঘাস উৎপাদিত হতে পারে।

৪১. প্রতি কেজি ঘাসের পুষ্টিমাণ কি রকম?

• প্রতি কেজি ঘাসে শুষ্ক পদার্থ ৩৩৫ গ্রাম, জৈব পদার্থ ৩২৭ গ্রাম, আমিষ ২১ গ্রাম, আঁশ ১৮৩ গ্রাম, পাচ্যতা ৬০% এবং বিপাকীয় শক্তি ৩.২০ মেগা জুল থাকতে পারে।

৪২. স্প্লেনডিডা ঘাস কিভাবে সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যেতে পারে?

• সাইলেজ বা শুকিয়ে হে তৈরির মাধ্যমে স্প্লেনডিডা ঘাস সংরক্ষণ করে খাওয়ানো যেতে পারে।

৪৩. বছরের কোন সময়ে রোজা জাতের ঘাস রোপণ করা যায়?

• বছরের যে কোন সময়ে রোজা জাতের ঘাস রোপণ করা যায় তবে ফাল্গুণ-চৈত্র মাস উত্তম সময়।

৪৪. কোন ধরণের জমিতে রোজা জাতের ঘাস রোপণ করা যেতে পারে?

• এ ঘাস মধ্যম মানের লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এ ছাড়া জলাবদ্ধ ও পাহাড়ী ঢাল ছাড়া বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এ ঘাস জন্মায়।

৪৫. রোজা জাতের ঘাস চাষ করতে কিভাবে জমি তৈরি করতে হবে?

• আগাছা পরিষ্কার করে ২-৩ বার চাষ দিতে হবে। এ ছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে পানি নেমে যাওয়ার পর কাদা মাটিতে ঘাসের মুথা লাগানো যেতে পারে।

৪৬. প্রতি হেক্টর জমিতে কত সংখ্যক মুথা লাগানো যেতে পারে?

• ৩৫-৪০ হাজার মুথা লাড়ানো যেতে পারে। চারা থেকে চারা ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং ৩৫ সে.মি. দূরত্ব থাকতে পারে।

৪৭. রোজা ঘাস চাষে কিভাবে সার প্রয়োগ করা হয়?

• প্রতি হেক্টর জমি তৈরির সময়ে ৫০:৭০:৩০ কেজি অনুপাতে যথাক্রমে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

৪৮. ঘাস লাগানোর পর আবার সার দেয়ার প্রয়োজন হয় কি?

• লাগানোর এক মাস পর প্রতি হেক্টরে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া এবং প্রতি কাটিং-এর পরে একই মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

৪৯. রোজা ঘাস চাষে সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় কি?

• খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়।

৫০. বছরে কোন কোন সময়ে ঘাস কাটা যায়?

•গ্রীষ্মকালে প্রতি ৩০-৩৫ দিন পরপর এবং সেচ সুবিধা সাপেক্ষে শীতকালে প্রতি ৩৫-৪০ দিন পরপর ঘাস কাটা যেতে পারে।

৫১. বছরে কতবার ঘাস কাটা যায়?

• প্রথম বছর ৭-৮ বার এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বছরে ৮-১০ বার কাটা যায়।

৫২. প্রতি হেক্টর জমিতে কী পরিমাণ রোজা ঘাস উৎপাদিত হয়?

• প্রতি হেক্টরে ৭০-৯০ টন ঘাস উৎপাদিত হয়।

৫৩. প্রতি কেজি ঘাস থেকে কী পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে?
• শুষ্ক পদার্থ ২২০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ১৯৯ গ্রাম, আমিষ ২৬ গ্রাম, আঁশ ১১৬ গ্রাম, পাচ্যতা ৬০% এবং বিপাকীয় শক্তি ২.১০ মেগা জুল।

৫৪. রোজা ঘাস কি পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে?

• হে হিসাবে শুকিয়ে অথবা সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাওয়ানো যেতে পারে।

৫৫. জাম্বু ঘাস বছরের কোন কোন সময়ে চাষ করা যায়?

• বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায় তবে উত্তম সময় হচ্ছে ফাল্গুণ-চৈত্র মাসে।

৫৬. কোন ধরণের মাটিতে জাম্বু ঘাস চাষ করা যায়?

• জলাবদ্ধ, পাহাড়ী ঢাল এবং লবণাক্ত স্থান ছাড়া বাংলাদেশের সব জায়গায় এ ঘাস চাষ করা যায়।

৫৭. জাম্বু ঘাস চাষের জন্য কিভাবে জমি চাষ করা যায়?

• আগাছা পরিষ্কার করে ৩-৪ বার চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে অথবা বন্যা পরবর্তী সময়ে কাদা মাটিতে ঘাস লাগানো যেতে পারে।

৫৮. জাম্বু ঘাস চাষের ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টর জমিতে কয়টি কাটিং লাগাতে হবে?

• সাত কেজি অথবা ৩৫-৪০ হাজার কাটিং/মুথা লাগাতে হবে।

৫৯. জাম্বু ঘাস রোপণে কাটিং এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব কতটুকু থাকতে হবে?

• সারি থেকে সারি ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং ৩৫ সে.মি.।

৬০. জাম্বু ঘাস চাষে সার প্রয়োগের নিয়মাবলী কি কি?

• জমি তৈরির সময় ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি যথাক্রমে ৫০:৭৯:৩০ কেজি অনুপাতে প্রতি হেক্টরে দিতে হবে।

৬১. ঘাস লাগানো এবং প্রতি কাটিং-এর পর কত পরিমাণে কোন ধরণের সার দিতে হবে?

• ঘাস লাগানোর এক মাস পরে এবং প্রতি কাটিং-এর পরপরই প্রতি হেক্টরে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।

৬২. জাম্বু ঘাস চাষে সেচ দেয়ার প্রয়োজন আছে কি?

• খরা মৌসুমে প্রতি ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দেয়ার দরকার হয়।

৬৩. বছরের কোন সময় জাম্বু ঘাস কাটা যায়?

• গ্রীষ্মকালে ৩০-৪৫ দিন পরপর, শীতকালে সেচ সুবিধা সাপেক্ষে ৪০-৫০ দিন পরপর ঘাস কাটা যায়।

৬৪. জাম্বু ঘাস বছরে কতবার কাটা যায় এবং কতটন ঘাস উৎপাদিত হয়?

• প্রথম আবাদে প্রথম বছর ৫-৬ বার, দ্বিতীয় বছরে ৭-৮ বার কাটা যায় এবং প্রতি হেক্টরে ১০০-১৫০ টন ঘাস উৎপাদিত হয়।

৬৫. প্রতি কেজি জাম্বু ঘাসে পুষ্টির পরিমাণ কতটুক?

• শুষ্ক পদার্থ ১৯০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ১৮০ গ্রাম, আমিষ ২১ গ্রাম, আঁশ ৭৫ গ্রাম, পাচ্যতা ৬৩% এবং বিপাকীয় শক্তি ১.৯৫ মেগা জুল।

৬৬. জাম্বু ঘাস কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়?

• সাইলেজ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যায়।

৬৭. পারা ঘাস বছরের কোন সময়ে লাগানো যায়?

• বছরের যে কোন সময়ে লাগানো যায় তবে ফাল্গণ-চৈত্র মাসে লাগানো সবচেয়ে উত্তম।

৬৮. কোন ধরণের মাটিতে পারা ঘাস লাগানো যায়?

• জলাবদ্ধ, লবণাক্ত এবং পাহাড়ী ঢালসহ সব ধরণের মাটিতে লাগানো যায়।

৬৯. পারা ঘাস লাগানোর জন্য জমি তৈরি করতে হয় কিভাবে?

• আগাছা পরিষ্কার করে ৩-৪ বার ভালোভাবে চাষ করে অথবা বন্যা পরবর্তী কাদা মাটিতে পারা ঘাস লাগানো যেতে পারে।

৭০. পারা ঘাস চাষে প্রতি হেক্টর জমিতে কত সংখ্যক কাটিং লাগাতে হবে?

• ২৮-৩০ হাজার কাটিং লাগাতে হবে।

৭১. পারা ঘাস চাষে কাটিং লাগানোর দূরত্ব কতটুকু হতে হবে?

• সারি থেকে সারি ৭০ সে.মি. এবং কাটিং থেকে কাটিং ৩৫ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হবে।

৭২. পারা ঘাস চাষে সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় কি?

• জমি তৈরির সময় প্রতি হেক্টরে ৫০:৭০:৩০ কেজি অনুপাতে যথাক্রমে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

৭৩. পারা ঘাস লাগানো এবং কাটি-এর পর কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে?

• এক মাস পরে এবং প্রতি কাটিং-এরপর পরই হেক্টর প্রতি ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

৭৪. পারা চাষে কোন মৌসুমে সেচ দিতে হবে?

• খরা মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয়।

৭৫. বছরে কোন কোন সময়ে ঘাস কাটা যায়?

• গ্রীষ্মকালে ৩০-৩৫ দিন পর এবং শীতকালে সেচ সুবিধার প্রেক্ষাপটে ৩৫-৪৫ দিন পর ঘাস কাটা যায়।

৭৬. পারা ঘাস বছরে কতবার কাটা যায়?

• প্রথম চাষে ৬-৭ বার এবং ২য়, ৩য় ও ৪র্থ চাষে ৭-৯ বার ঘাস কাটা যায়।

৭৭. বছরে প্রতি হেক্টর জমিতে কী পরিমাণ পারা ঘাস উৎপাদিত হয়?

• ১০০-১২০ টন ঘাস উৎপাদিত হয়।

৭৮. প্রতি কেজি কাঁচা পারা ঘাসের পুষ্টিমাণ কত?

• শুষ্ক পদার্থ ২৬০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, আমিষ ১৮ গ্রাম, আঁশ ১১৩ গ্রাম, পাচ্যতা ৬০% এবং বিপাকীয় শক্তি ২.৬০ মেগা জুল।

৭৯. পারা ঘাস কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়?

• সাইলেজ তৈরি করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৮০. শতকরা ১৫-২০ ভাগ শুকনো খড়ের স্তর হিসাবে ব্যবহার করলে সাইলেজ থেকে বাড়তি আর কি সুবিধা পাওয়া যেতে পারে?

• পরবর্তীতে খড় আর আলাদা করে খাওয়াতে হয় না।

৮১. সাইলেজের স্তরে খড় দিতে না পারলে অন্য কি ঘাস স্তর হিসাবে দেয়া যেতে পারে?

• ডাল বা সিম-জাতীয় ঘাস যথা খেসারী, মাষকালাই, কাউপি বা হেলেন ডাল, ইপিল-ইপিল ইত্যাদি ঘাস সবুজ অবস্থায় সাইলেজ করে রাখা যেতে পারে।

৮২. ডাল বা সিম-জাতীয় ঘাসে সাইলেজ করলে কি অসুবিধা হতে পারে?

• এ জাতীয় ঘাসে অধিক মাত্রায় আমিষ থাকে বিধায় শুধু ডাল-জাতীয় ঘাস দ্বারা সাইলেজ তৈরি করলে ভালো সাইলেজ নাও হতে পারে।

৮৩. ডাল-জাতীয় ঘাসের সাথে অ-ডাল-জাতীয় ঘাস মিশিয়ে সাইলেজ করা যাবে কি?

• ডাল-জাতীয় ঘাসের সাথে অ-ডাল-জাতীয় ঘাস (ভূট্টা, নেপিয়ার ইত্যাদি) সর্বোচ্চ ১:১ এবং সর্বনিম্ন ১:৩ অনুপাতে মিশিয়ে চিটাগুড়ের সংমিশ্রণে সাইলেজ করা উত্তম। এক্ষেত্রে মিশ্রিত ঘাসের ভাজে ভাজে পূর্বে বর্ণিত খড় দেয়া ভালো।

৮৪. অ-ডাল-জাতীয় ঘাস না পাওয়া গেলে তখন কি করা যাবে?

• পূর্বের নিয়মেই ঘাসের সাথে খড় ব্যবহার করে সাইলেজ তৈরি করা যেতে পারে।

৮৫. কোন ধরণের গর্তে কী পরিমাণ ঘাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে?

• প্রতি ১০০ ঘণফুটের মাটির গর্তে ২.৫-৩.০ টন সবুজ ঘাস সংগ্রহ করা যেতে পারে।

৮৬. ঘাস লাগানো এবং প্রতি কাটিং-এর পর কত পরিমাণে কোন ধরণের সার দিতে হবে?

• ঘাস লাগানোর এক মাস পরে এবং প্রতি কাটিং-এর পর পরই প্রতি হেক্টরে ৫০-৭৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে।

৮৭. একশত ঘণফুটের মাটির গর্তের আকার আয়তন কি রকম হতে পারে?

• গর্তটি অবশ্যই উঁচু জায়গায় (যেখানে পানি কোনভাবেই গর্তে প্রবেশ করতে পারবে না) ৩ ফুট গভীরতা, ৩ ফুট প্রস্থ, মাঝে ৮ ফুট এবং উপরে ১০ ফুট আকারের গর্ত করতে হবে।

৮৮. গর্তের আকার কি রকম হতে হবে?

• ঘাসের পরিমাণের উপর গর্তের আকার নির্ভর করবে তবে গর্তের তলা পাতিলের তলার মত সমানভাবে বাঁকা হলে সহজে ঘাস চাপানো যাবে।

৮৯. সাইলেজ পদ্ধতিতে ঘাস সংগ্রহের ক্ষেত্রে খরচ কমানোর উপায় কি হতে পারে?

• খরচ কমানোর জন্য সাইলোর তলায় এবং চারদিক শুকনো খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া যায়।

৯০. সাইলো ঢাকার জন্য কোন মাপের পলিথিনের প্রয়োজন হবে?

• দুই গজ প্রস্থের ডাবল পলিথিনের ৮-৯ গজ পলিথিন হলে ২০ ফুটের একটি সাইলো পিটের শুধু উপরের দিক বন্ধ করা যাবে কিন্তু সাইলো পিটের চারদিকে মুড়লে পলিথিনের পরিমাণ ও সাইলেজ খরচ বেড়ে যাবে।

৯১. সাইলেজ তৈরির ক্ষেত্রে কত পরিমাণ চিটাগুড় এবং কি পরিমাণ পানি মিশাতে হবে?

• সবুজ ঘাসের ৩-৪% চিটাগুড় মেপে বাড়িতে নিয়ে তাতে ১:১ অথবা ৪:৩ অনুপাতে পানি (চিটাগুড়:পানি মিশাতে হবে) যাতে সহজে ঝরনা দ্বারা সমভাবে ঘাসের উপর ছিটানো যেতে পারে।

৯২. সাইলোর তলায় কিভাবে পলিথিন দিতে হবে?

• পলিথিন বিছিয়ে দিতে হবে, না পারলে পুরু করে খড় বিছাতে হবে। দুই পাশে্ পলিথিন না দিতে চাইলে ঘাস সাজানোর সাথে সাথে খড়ের আস্তরণী দিতে হবে।

৯৩. সবুজ ঘাস এবং শুকনো খড় কিভাবে দিতে হবে?

• সবুজ ঘাসের সাথে ভাজে ভাজে শুকনো খড় দিতে হবে। প্রতি ভাজে ৩০০ কেজি সবুজ ঘাসের সাথে ১৫ কেজি শুকনো খড় দিতে হবে । প্রতি ৩০০ কেজি ঘাসের ভাজে ভাজে ৯-১২ কেজি চিটাগুড় এবং ৮-১০ লি. পানি মিশিয়ে ঝর্ণা বা হাত দিয়ে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। খড়ের ভিতরে কোন চিটাগুড় দিতে হবে না। এভাবে ভাজে ভাজে ঘাসের সাথে খড় সাজাতে হবে এবং সাথে সাথে ভালোভাবে পা দিয়ে চেপে ভেতরের বাতাস যথা সম্ভব বের করতে হবে। ঘাস যত এঁটে সাজানো যাবে সাইলেজ তত উন্নত হবে।

৯৪. ঘাস-ভর্তি সাইলো পিটের উচ্চতা কতটুকু হতে পারে?

• সাইলো ভর্তি করার জন্য মাটির উপরে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত ঘাস সাজাতে হবে। ঘাস সাজানো শেষ হওয়ার পর ঘাসের উপরে খড় দ্বারা পুরু করে আস্তরণ দিয়ে নিখুঁতভাবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

৯৫. সাইলো পিটের উপরে মাটি দেয়া হয় কেন?

• সাইলো পিটের পলিথিনের উপরে সর্বশেষে ৩-৪ ইঞ্চি পুরু করে মাটি দিলে পলিথিন শক্তভাবে বসে পড়বে।

৯৬. সাইলো পিটে সমস্ত ঘাস কি একই দিনে সাজাতে হবে?

• সাইলো পিটে একই দিনে সম্পূর্ন ঘাস সাজানো যেতে পারে তবে বৃষ্টি না থাকলে প্রতিদিনই সামান্য সামান্য করেও কয়েকদিনের মধ্যেই সাইলো পিট ভর্তি করা যেতে পারে।

৯৭. সাইলেজ খাওয়ানোর নিয়ম কি?

• প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য গরুকে ১০ কেজি হিসাবে সাইলেজ খাওয়ানো যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমে-প্রাপ্ত ঘাস সংরক্ষণ করলে শুকনা মৌসুমে গো-খাদ্যের অভাব কমানো যেতে পারে।

৯৮. সাইলেজ তৈরিতে সার্বিকভাবে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?

• সাইলেজ যাতে পানিতে নষ্ট না হয় সে জন্য নিচু জায়গায় কখনো সাইলেজ করা যাবে না, সাইলেজের ভিতরে পানির প্রবেশ এড়াতে পলিথিন নিশ্চিতভাবে এঁটে দিতে হবে। চিটাগুড় পাতলা হলে তার পরিমাণ বাড়িয়ে পানি কমিয়ে মিশাতে হবে, আবার বেশি পাতলা হলে চিটাগুড় ঘাস থেকে চুঁইয়ে নিচে পড়ে আঁঠালো দ্রবণ তৈরি করে ঘাসের গায়ে লেগে থাকবে, ফাঁকা জায়গাগুলো যথাসম্ভব বন্ধ করার প্রয়োজনে সাইলোর কোণার ঘাস ও খড় ভালোভাবে পা দিয়ে চেপে সাজাতে হবে, ঘাসের সাথে খুব বেশি পানি থাকা ঠিক হবে না ।