দুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণ

ভূমিকা


অনাদিকাল থেকেই দুধ সকল পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আদর্শ খাদ্য যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের সকল মানুষের কাছে বিশেষভাবে সমাদৃত। এ কারণে সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে দুধের সার্বিক গুণাগুণ রক্ষা করা একান্ত অপরিহার্য। স্থান, কাল, পাত্রভেদে সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি দুধ অনন্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর পদ্ধতিতে উৎপাদিত দূষিত দুধ জন স্বাস্থ্যের হানিকর কিংবা জীবননাশের অন্যতম কারণ হতে পারে। সর্বজন স্বীকৃত এরূপ বিশেষ বিবেচ্য কারণে নিরাপদ দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ে বিজ্ঞানসম্মত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। ভালো জাতের অধিক দুধ উৎপাদনকারী সুস্থ গাভী, স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান, নির্ভেজাল সুষম খাদ্য, উন্নত পালন পদ্ধতি, দুগ্ধ দোহন, সংরক্ষণ, পরিবহণ, বাজারজাতকরণ, গুণগত মান রক্ষণ এবং সর্বোপরি সর্ব পর্যায়ে জৈব্য নিরাপত্তা-বিষয়ক প্রশ্নোত্তর বিষয়াদি নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট তথ্য


১. দুধের আদর্শগত গুরুত্ব এত বেশি কেন?

• প্রকৃতির আদর্শ খাদ্য হচ্ছে দুধ। দুধের সমস্ত অংশই খাদ্য হিসাবে গ্রহণীয় এবং খাদ্যের সব কয়টি উপাদান দুধে আছে।

২. দুধকে স্বয়ং সম্পূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ ও আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন?

• খাদ্যের সকল উপাদানসমৃদ্ধ দুধ অতীব সুস্বাদু, সহজ পাচ্য, সব বয়সের মানুষের ভারসাম্য-রক্ষাকারী সুষম খাদ্য, স্বল্প ব্যয়বহুল, দোহনের পরই পান করতে বিশেষ কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না, সকল অংশই খাদ্য হিসাবে গ্রহণীয় এবং দুধ থেকে বহুবিধ উপাদেয় খাদ্য তৈরি করা যায়।

৩. গাভীর দুধ উৎপাদন কিসের উপর নির্ভরশীল?

• ভাল জাত, বয়স, বাচ্চা প্রদানের সংখ্যা, খাদ্য, বাসস্থান, গর্ভাবস্থা, পরিচর্যা, শারিরীক সুস্থতা ও রোগব্যাধি ইত্যাদির উপর গাভীর দুধ উৎপাদন নির্ভরশীল।

৪. বাচ্চা প্রসবের কতদিন পর গাভী সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়?

• সাধারণত ৩-৬ সপ্তাহ পরে।

৫. অধিক দুধ-প্রদানকারী গাভী লাভজনক অবস্থায় সর্বোচ্চ কতদিন দোহন করা উচিত?

• ৩০০-৩০৫ দিন।

৬. শাল দুধ বলতে কোন ধরণের দুধ বুঝায়?

• বাচ্চা প্রসবের পরপরই গাভী প্রথম তিন-চার দিন যে দুধ দেয় তাকে কলস্ট্রাম বা শাল দুধ বলা হয়।

৭. গাভীর শাল দুধ ও স্বাভাবিক দুধের মধ্যে পার্থক্য কি?

• শাল দুধে পানি কম, চর্বি ও খনিজ বেশি থাকে, শাল দুধে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান অনেক কম থাকে।

৮. কোন প্রাণির দুধে পানির পরিমান বেশি থাকে?

• গাভী, ছাগী এবং স্ত্রীলোকের দুধে পানি সাধারণত বেশি থাকে।

৯. দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় জড়িত?

• গাভীর জাত, খাদ্য, পরিবেশ, ওলানের গঠন, দুধ দোহন ও গাভীর বয়স দুধ উৎপাদনের সাথে জড়িত।

১০. পুরুষ গরু-মহিষের স্তনগ্রন্থি থাকে না কেন?

• স্তনগ্রন্থি থাকে তবে ক্ষীন আকারে লুপ্তপ্রায় অবস্থায় দৃষ্ট থাকে।

১১. স্ত্রী পশুর স্তনগ্রন্থি কিভাবে বড় হতে থাকে?

• বয়স বাড়ার সাথে সাথে হরমোন নামক এক প্রকার প্রাণরসের সঞ্চালনে স্তনগ্রন্থি বাড়তে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর বাড়ে না।

১২. দুধ তৈরির জন্য কি কি হরমোন প্রয়োজন?

• ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টারোন, সোমাটোট্রাপিন, প্রন্যাকটিন, থাইরোসিন এবং অক্সিকটিকোস্টেরোন হরমোনের প্রয়োজন হয়।

১৩. ওলানের গঠন কি কি দ্বারা হয়?

• মধ্যবর্তী ও পার্শ্ববর্তী বন্ধনী, ত্বক, গ্রন্থি, বাঁট এবং আরও দু'একটি অংশ নিয়ে ওলান গঠিত হয়।

১৪. পূর্ণ বয়স্ক ভাল জাতের গাভীর ওলান কত ওজনের হতে পারে?

• ১২-৩০ কেজি ওজনের হতে পারে।

১৫. গাভীর ওলানের কয়টি প্রকোষ্ঠ বা অংশ থাকে?

• চারটি অংশ থাকে।

১৬. কোন প্রকোষ্ঠে কি পরিমানে দুধ উৎপাদিত হয়?

• সামনের দিকের প্রকোষ্ঠে ৪০% এবং পেছনের দিকের প্রকোষ্ঠে ৬০% দুধ উৎপাদিত হয়।

১৭. গাভীর সাধারণ বাটের আশেপাশে অতিরিক্ত আরও একটি বাট দেখা যায় এর কাজ কি?

• গাভীর বাট সব সময়ই চারটি থাকে তবে অতিরিক্ত বাটের কোন কার্যকারীতা নেই। অতিরিক্ত বাটকে ভূয়া বাট বলা হয়।

১৮. ওলানের কোন অংশ থেকে দুধে সংক্রমণ হতে পারে?

• বাটের স্ট্রিক ক্যানালের মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।

১৯. হাতে দুধ দোহনের ক্ষেত্রে বাটের কোন অংশে চাপ দিতে হয়?

• বাটের উপরিভাগে আঙুল দ্বারা চাপ দিয়ে বন্ধ রেখে নিচের অংশে চাপ দিলে দুধ বের হয়ে আসে।

২০. দুধ উৎপাদনকালে ওলানে রক্ত সরবরাহ কি রকম থাকে?

• অতিমাত্রায় বেশি থাকে, প্রতি মিলিলিটার দুধ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৪০০-৫০০ মিলিলিটার রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন হয়।

২১. দুগ্ধ শিরা বড় ও মোটা থাকলে গাভী বেশি দুধ দেয় কি?

• প্রকৃতপক্ষে দুগ্ধ উৎপাদনের সাথে দুগ্ধ শিরার সরাসরি সম্পর্ক আজও প্রমানিত হয় নি।

২২. গাভীর ওলান থেকে দুধ-নামা বলতে কি বুঝায়?

• বাছুরের মুখ বা দোহনকারীর হাতের স্পর্শের অনুভূতি স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে পৌছে এবং অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণের ফলে দুধ বাটকুপে চলে আসে। এই পদ্ধতিকে দুধ-নামা বা মিল্ক লেটডাউন বলা হয়।

২৩. ওলানে জমানো দুধ কখনো আপনাআপনি ঝরে পড়ে না কেন?

• বাটের ছিদ্রমুখ স্থিতিস্থাপক কলা দ্বারা মোড়া থাকে। সাধারণত বাহিরের কোন প্রকার চাপের সাহায্য ছাড়া দুধ বাট থেকে বের হয় না।

২৪. দুধ উৎপাদন ও নিঃসরণে কোন হরমোন (প্রাণরস) সহায়তা করে থাকে?

• পশ্চাৎ পিটুইটারী গ্রন্থির অক্সিটোসিন সাধারণত সহায়তা করে।

২৫. হরমোন বা প্রাণরস বলতে কোন পদার্থকে বুঝায়?

• হরমোন আমিষ-জাতীয় পদার্থ। উল্লেখ্য যে, থাইরোক্সিন হরমোনে আয়োডিন আছে বিধায় আয়োডিনযুক্ত কেসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে গাভীর শরীরে প্রবেশ করালে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

২৬. দুধের উৎপাদনের ক্ষমতা কিভাবে ধরে রাখা যায়?

• দোহন ও নিঃসরণের শিহরণ, দুধ ক্ষরণের ক্ষেত্রে ওলানের ভিতরের চাপ এবং নিয়মমত স্বাভাবিক অবস্থায় দুধ দোহন করতে হবে।

২৭. কি কি কারণে দুধ উৎপাদন কমতে পারে?

• নিয়ম বহির্ভূত দোহনে দুধ উৎপাদন কমে যায় এমনকি বন্ধ হয়ে যায়। গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে গর্ভফুলের হরমোন এবং প্রজেস্টারন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্যে দুধ উৎপাদন কমে যায়।

২৮. দুধ দোহন কাকে বলে?

• গাভীর ওলান থেকে দুধ বের করার পদ্ধতিকে দুধ দোহন বলে।

২৯. দুধ দোহনের ক্ষেত্রে দোহনকারীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কি প্রয়োজন?

• জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ দুধ উৎপাদন ও সংরক্ষণের জন্য দোহনকারীর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়োজন আছে।

৩০. দুধ কিভাবে দূষিত বা সংক্রমিত হয়?

• দোহনকারীর অসাবধানতা, অপরিচ্ছন্নতা, সকল পর্যায়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, দোহনের সংক্রমিত সরঞ্জাম, অস্বাস্থ্যকর সংরক্ষণ ও পরিবহনের সমস্যা ইত্যাদি কারণে দুধ সংক্রমিত হতে পারে।

৩১. দোহনকালীন সময়ে দুধ উৎপাদন কম হয় কিভাবে?

• গাভীর ওলানে পর্যাপ্ত দুধ থাকা সত্বেও অসম্পূর্ণ দোহনের কারণে দুধ উৎপাদন কম হতে পারে।

৩২. সুষ্ঠুভাবে দুধ দোহনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কি কি করণীয় থাকতে পারে?

• ঘরের পরিবেশ শান্ত, নিরুদ্রপ, আরামদায়ক ও সন্তোষজনক অবস্থায় গাভী দোহন করতে হবে, যে কোন উচ্চ শব্দ, আগন্তুকের উপস্থিতি, চিকিৎসা ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অনাকাংখিত পরিস্থিতি পরিহার করতে হবে।

৩৩. কি কি নিয়ম মেনে দুধ দোহন করতে হবে?

• একই স্থায়ী অভ্যাসে দোহনের সুষ্ঠু এবং গাভীর আরামদায়ক অবস্থা বহাল রেখে, নিয়মিত বিরতিতে দিনে সাধারণত দু’বার দোহন করতে হবে তবে ১২ ঘন্টার বিরতি রক্ষা করে সর্বোচ্চ মাত্রায় দুধ ক্ষরণের আশা করা যেতে পারে।

৩৪. অধিক দুধ-প্রদানকারী গাভীর ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যতিক্রম হলে কি অসুবিধা হবে?

• ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্যতিক্রম হলে দুধ উৎপাদন কমে যাবে।

৩৫. গোয়ালা ও গাভীর মধ্যে দোহনের ক্ষেত্রে কী সম্পর্ক থাকতে হবে?

• একে অপরের পছন্দীয় হতে হবে, কোন অবস্থাতেই দোহনের আগে কোনভাবে গাভীকে বিরক্ত করা যাবে না।

৩৬. দুধ দোহন ও উৎপাদনের মধ্যে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কি ধরণের সম্পর্ক থাকতে পারে?

• জীবাণুমুক্ত দুধ দোহনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণের পরক্ষণেই গাভী দোহন করতে হবে এবং দোহনকারীর সকল অস্বাস্থ্যকর ও বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

৩৭. দোহনের বাসনপত্র কি রকম হওয়া উচিত?

•পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত পাত্র আবশ্যক, বড় মুখবিশিষ্ট খোলা বালতি অপেক্ষা গম্বুজ আকৃতির দোহনপাত্র অধিক উপযোগী, প্রতিবার দোহনের পরপরই পাত্রটি যথানিয়মে গরম পানিতে ধূয়ে পরে ঠান্ডা পানি দ্বারা ভালভাবে পরিস্কার করতে হবে এবং শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৩৮. দুধ বাটে নামার কতক্ষণের মধ্যে দোহন করা দরকার?

•৩-৭ মিনিটের মধ্যে ওলানের সবটুকু দুধ দোহন করতে হবে অন্যথায় ওলানের অবশিষ্ট দুধ দ্বারা গাভীর ঠুনকো (ওলান ফুলা) রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৩৯. দোহনের সময় গাভীকে খাবার খাওয়ানো যাবে কি?

•দৈনিক বরাদ্দের দানাদার খাদ্যের সামান্য অংশ এবং সামান্য লবণ দুধ দোহনের সময় গাভীর মুখে ধরে গাভীকে খেতে ব্যস্ত রাখলে ওলানের সমস্ত দুধ দোহন সহজ হয়।

৪০. সকল গাভীকেই কি একই সময় দোহন করা যাবে?

•সুস্থ গাভী দোহনের পর ম্যাসটাইটিস রোগাক্রান্ত গাভী দোহন করতে হবে। আক্রান্ত গাভী একটা নির্ধারিত সময়ে দোহন করা একান্ত দরকার।

৪১. রোগাক্রান্ত গাভী দোহনের ক্রমধারা কেমন হওয়া উচিত?

•প্রথমত রোগমুক্ত বকনা গাভী, দ্বিতীয়ত রোগমুক্ত সম্পূর্ণ সুস্থ গাভী, তৃতীয়ত পূর্বে রোগাক্রান্ত ও বর্তমানে সুস্থ গাভী এবং চতুর্থত সন্দেহযুক্ত, অস্বাভাবিক দুধ-উৎপাদনকারী এবং সর্বশেষে রোগাক্রান্ত গাভী দোহন করতে হবে।

৪২. বকনা গাভী কোন নিয়মক্রমে দোয়ানো উচিৎ?

•বাট খাটো থাকে বিধায় স্ট্রিপকাপ ব্যবহার করা যাবে না, প্রথম ক্ষেত্রে বকনা ওলানে দুধ ধরে রাখে বিধায় দোহনের ২-৩ মিনেট আগে মাংসে অক্সিটোসিন ইনজেকশন প্রদান করতে হবে। ২ বা ৩ দিন এভাবে ইনজেকশন দিতে হবে।

৪৩. কি কি পদ্ধতিতে দুগ্ধ দোহন করা যেতে পারে?

•হাতের সাহায্যে, স্ট্রিপকাপ পদ্ধতিতে এবং স্ট্রিপিং পদ্ধতিতে। হাতের সাহায্যে সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশী গাভী দোহন করা হয়। অন্যান্য পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গোয়ালা ও যন্ত্রপাতির দরকার হয়।

৪৪. দুধ উৎপাদনে গাভীর জাত এবং প্রজাতির ক্ষেত্রে পার্থক্য হতে পারে কি?

•দুধ উৎপাদন এবং দুধের উপাদানে যেমন চর্বি, আমিষ, খনিজ পদার্থের ক্ষেত্রে জাত এবং প্রজাতিভেদে পার্থক্য হয়। এ ধরণের পার্থক্য কোন কোন ক্ষেত্রে একই জাত/প্রজাতির গাভীর দুধেও হতে পারে।

৪৫. কোন জাতের গাভীর দুধে চর্বি বেশি থাকে?

• বিদেশী জাতের গাভী যেমন: হলস্টেন ফ্রিজিয়ান, জার্সি ইত্যাদি জাতের গাভীর দুধের চেয়ে সিন্ধি, শাহিওয়াল ও হরিয়ানা জাতের গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে।

৪৬. কোন জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি?

•হলস্টেন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি-এ সব জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা শাহিওয়াল, সিন্ধি, হরিয়ানা, থারপারকার জাতের গাভীর তুলনায় অনেক বেশি।

৪৭. বয়সভেদে গাভীর দুধ উৎপাদন ভিন্ন হতে পারে কি?

•প্রথম বিয়ানে কম দুধ দেয়, আস্তে আস্তে বাড়তে বাড়তে ৪র্থ বিয়ানে সবচেয়ে বেশি দুধ দেয়, সাথে সাথে দুধে চর্বির পরিমাণও বাড়তে থাকে, পরবর্তীতে দুধের উৎপাদন ও চর্বির পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে।

৪৮. খাদ্য ব্যবস্থাপনার কারণে দুধের উৎপাদন এবং গুণগত মান কম-বেশি হতে পারে কি?

•পরিমিত সুষম খাদ্য খাওয়ালে জাতের বৈশিষ্ট্যানুসারে বেশি পরিমাণ দুধ উৎপাদন হতে পারে। রসালো এবং দানাদার সামগ্রী মিশিয়ে খাওয়ালে দুধে পানির পরিমাণ বেড়ে চর্বির পরিমাণ কমে যায়।

৪৯. কি কি ধরণের খাবার খাওয়ালে গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ কমে যায়?

•অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য, বড়ি-জাতীয় খাদ্য, অতিরিক্ত রসালো ঘাস/খাদ্য এবং মিহিভাবে গুঁড়া করা খড়-জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে দুধের চর্বি কমে যায়।

৫০. গাভীর দুধে চর্বির পরিমাণ কমে গেলে কি করতে হবে?

•খাদ্য পরিবর্তন করে সুষম খাদ্য দিতে হবে, খাদ্যের খনিজ ও ভিটামিন বাড়াতে হবে। সুষম খাদ্য ছাড়া দুধের আমিষ ও শর্করা উপাদান কমে যায় এবং দুধও কমে যায়।

৫১. দুধ সংরক্ষণ বলতে কি বুঝায়?

•সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুধকে খাদ্যোপযোগী এবং পচনমুক্ত রাখার প্রক্রিয়াকে দুধ সংরক্ষণ বলে।

৫২. দুধ সংরক্ষণ কেন করা হয়?

•সুনির্দিষ্ট দীর্ঘ সময় পর্যন্ত গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য, নির্ধারিত ব্যবহারের পর অতিরিক্ত দুধ লাভজনক দামে বিক্রি করার জন্য, দুধে জীবাণু না হওয়ার জন্য, পরিবহনের সময় দুধ যাতে ঠিক থাকে এবং দুধের স্বাদ ঠিক রাখার জন্য।

৫৩. দুধ সংরক্ষণের কাজ কি খুব কঠিন?

•দুধ সংরক্ষণের কাজ বেশ কঠিন কারণ দুধের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন খুব সহজেই ঘটে।

৫৪. পারিবারিক পর্যায়ে ডিপ ফ্রিজে দুধ জমা রাখলে কি হবে?

•দুধে জীবাণু বৃদ্ধি পায় না তবে রাসায়নিক গঠন ভেঙ্গে যায় এবং এতে দুধের গুণগত মান অনেক কমে যায়।

৫৫. পারিবারিক পর্যায়ে রান্না করে আগুণে ফুটালে দুধের কোন ক্ষতি হয় কি?

•প্রতি চার ঘন্টা পরপর আগুণের তাপে ফুটালে দুধের সব রকম জীবাণু-মুক্ত হয় তবে এক্ষেত্রে দুধের পুষ্টিমান অনেকটা কমে যায়।

৫৬. উচ্চ তাপ প্রক্রিয়ায় দুধ ফুটালে দুধের গুণগত কি পরিবর্তন হয়?

•দুধের কিছু পরিমাণ ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়।

৫৭. খোলামেলা অবস্থায় সাধারণ তাপমাত্রায় অনেকক্ষণ রাখলে দুধের কি ক্ষতি হয়?

•দুধের গুণগত মান ক্ষুন্ন হয় এবং বিভিন্ন জীবাণু দুধে ল্যাকটিক এ্যাসিড তৈরি করে দুধকে টক খাদ্যে পরিনত করে।

৫৮. ল্যাকটিক এ্যাসিড উৎপাদনকারী জীবাণুর নাম কি?

•প্রধানত স্ট্রেপ্টোকক্কাই জীবাণু ল্যাকটিক এ্যাসিড তৈরি করে থাকে।

৫৯. দুধে ল্যাকটিক এ্যাসিড তৈরি বন্ধ করার উপায় কি?

•সাধারণ তাপমাত্রায় স্ট্রেপ্টোকক্কাই নামক ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত বংশ বিস্তার করে দুধে ল্যাকটিক এ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে বিধায় সুবিধাজনক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ বন্ধ করা যায়।

৬০. কিভাবে দুধের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করা যায়?

•যে পদ্ধতিতে দুধের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করা হয় তাকে পাস্তুরাইজেশন বলে। এ পদ্ধতিতে দুধকে ১০-১৫ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত ৬০-৬২ ডিগ্রি সে. তাপ দিয়ে সাথে সাথেই ১০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঠান্ডা করলে দুধের ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করা হয়।

৬১. পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ কত দিন সংরক্ষিত রাখা যায়?

•ঠান্ডা অবস্থায় ৩-৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৫-৭ দিন পর্যন্ত পাস্তুরাইজেশন করে দুধ সংরক্ষণ করা যায়।

৬২. কম তাপে অনেক সময় গরম করে কিভাবে দুধ সংরক্ষণ করা যায়?

•৬২.৮ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট সময় গরম করে ৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করা যায়।

৬৩. বেশি তাপে কম সময়ে কিভাবে দুধ সংরক্ষণ করা যায়?

•দুধ ৭২.২ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় মাত্র ১৫ সেকেন্ড সময় গরম করে পুণরায় তা ৪ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করা যায়।

৬৪. অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ করে কিভাবে দুধ সংরক্ষণ করা যায়?

•এই নিয়মে দুধকে ১৩৭.৮ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় দুই সেকেন্ড সময় গরম করার ফলে দুধের জীবাণু ধ্বংস করে সংরক্ষণ করা যায়।

৬৫. কোন কোন ক্ষেত্রে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ সংরক্ষিত করা যায়?

• ব্যবসায়িক ভিক্তিতে বড় বড় দুগ্ধ খামারে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ সংরক্ষিত রেখে লাভবান হওয়ার প্রয়াসে যথা সময়ে বিক্রি করা হয়।মিল্কভিটা, প্রাণ, ধামরাই ডেইরী, সাভার ডেইরী ফার্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ সংরক্ষণ করা হয়।

৬৬. দুধ দ্বারা তৈরি দুগ্ধজাত খাদ্য সামগ্রী কিভাবে সংরক্ষণ করা হয়?

•ননী, মাখন, পনির, মিষ্টি, ছানা, আইসক্রিম, ঘণীভুত দুধ, পাউডার দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে দুধ সংরক্ষণ করা হয়। এ ছাড়া রসমালাই, চমচম, রসগোল্লা, রাজভোগ ইত্যাদি তৈরিতে দুধের ব্যবহার হয়ে থাকে।

৬৭. জীবাণু কিভাবে দুধে সংক্রমিত হতে পারে?

•দুধের দোহন, মাপামাপি, পরিবহন ও সংরক্ষণের সময়, গাভী ও দোহনকারী শরীর এবং বাতাস বা পাত্রের মাধ্যমে দুধ সংক্রমিত হতে পারে।

৬৮. গাভী ও দোহনকারীর মাধ্যমে কিভাবে দুধ দূষিত হতে পারে?

•গাভীর শরীর ও ওলানের ময়লা এবং দোহনকারীর হাতের মাধ্যমে দুধ দূষিত হতে পারে। এক্ষেত্রে দুধের পাত্র ভালমত ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দুধের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যায়।

৬৯. দোহনকারী আর কি কি সতর্কতা অবলম্বন করলে দুধের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা যায়?

•দোহনকারীর হাতের নখ পরিষ্কার রেখে ও চর্ম-রোগ দূর করে গাভীর সার্বিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

৭০. দুধের পাত্র ও বাতাসের মাধ্যমে কিভাবে দুধ দূষিত হতে পারে?

•বাতাসের ধূলাবালি দুধে মিশে দুধ দূষিত হতে পারে। এ জন্য ঝড় বা শক্ত বাতাস প্রবাহের সময় অথবা দুধ দোহনের স্থানে ঝাড়ু দেওয়ার সময় দুধ দোহন করা যাবে না ও দুধের পাত্র সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

৭১. গাভীর ওলানের মাধ্যমে কিভাবে দুধ দূষিত হতে পারে?

•ময়লাযুক্ত ওলান এবং ওলানের রোগব্যাধির (ম্যাসটাইটিস, দুধ জ্বর ইত্যাদি) মাধ্যমে দুধ দূষিত হতে পারে।

৭২. গোশালার কীটপতঙ্গঁ এবং রক্ষণাবেক্ষণকারীর মাধ্যমে দুধ দূষিত হতে পারে কি?

•মাছি, তেলাপোকা, ইঁদুর নিধন করে এবং দুধ দোহন ও সংরক্ষণের স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে দুধকে বিশুদ্ধ রাখতে হবে।

৭৩. গোশালা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কি কি জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে?

•বাজারে সহজে ও সস্তায় প্রাপ্য বায়োসিভ-৩০, নেগুভন, আয়োসান, স্যাভলন, প্রবিসেভ ও ডেটল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭৪. দুধ দোহনের আগে ও পরে কি করতে হবে?

•একটু তাড়াতাড়ি দুধ দোহন করতে হবে, দোহনের পর দুধকে ঠান্ডা স্হানে রাখতে হবে, হিমায়িত করার ব্যবস্হা করতে হবে এবং অধিক সময় ভালো রাখার জন্য পাস্তুরাইজেশন করতে হবে।

৭৫. রোগাক্রান্ত গাভী থেকে কিভাবে দুধ দূষিত হতে পারে?

•আক্রান্ত গাভীর মলমূত্র বা অনান্য বর্জ পদার্থ গাভীর ওলান ও শরীর এবং কাছাকাছি অন্যান্য স্হান থেকে আসা জীবাণু দ্বারা দুধ দূষিত হতে পারে।

৭৬. দুধের বিশুদ্ধতা কিভাবে যাচাই করা যেতে পারে?

•যে সকল তরল বা কঠিন বস্তু সহজে মিশিয়ে দুধের র্ং বা গুণাগুণ আপাতত ঠিক রাখা যায় তা ব্যবহার করে দুধের বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়।

৭৭. কিভাবে দুধে ভেজাল মেশানে যায়?

•অতি সহজ পন্থায় দুধের সাথে পানি মিশিয়ে, খাঁটি দুধের সাথে ননীবিহীন দুধ মিশিয়ে, খাঁটি দুধ থেকে মাখনের ভাগ কমিয়ে, খাঁটি দুধের সাথে পাউডার মিশিয়ে, ননীবিহীন পাউডার দুধ বা পানি মিশিয়ে এবং ফুলবিচির বীজের রস সাদা দুধের মত রং মিশিয়ে দুধ ভেজাল করা যায়। এ ছাড়া গাভীর দুধের সাথে অন্য পশুর দুধ মিশিয়েও ভেজাল করা যায়।

৭৮. দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব কি জন্য মাপা হয়?

•দুধের ভেজাল ধরার জন্য ল্যাক্টোমিটার নামক যন্ত্রের সাহায্যে আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়। খাঁটি দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব অপেক্ষা ভেজাল দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব কম বা বেশি হলে ধরা যাবে যে দুধে ভেজাল আছে।

৭৯. দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব বলতে কি বুঝায়?

•পানির আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০০ আর দুধের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৩২-১.০৩৪। এ আপেক্ষিক গুরুত্ব অংক দ্বারা বুঝা যায় যে, দুধ পানি অপেক্ষা ওজনে কতগুণ ভারী এবং এজন্য ভেজাল ধরার জন্য আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়।

৮০. ল্যাক্টোমিটারের সাহায্যে কিভাবে ভেজাল ধরা হয়?

•ল্যাক্টোমিটারের রিডিং সাধারণত ২৫-৩৫ হয়ে থাকে। দুধে ল্যাক্টোমিটার ডুবানোর পর যে রিডিং আসে তাকে নিম্নোক্ত সূ্ত্রের সাহায্যে আপেক্ষিক গুরুত্ব মাপা হয়:((ল্যাক্টোমিটারের রিডিং)/১০০০)+১=আপেক্ষিক গুরুত্ব।

৮১. দুধে পানি মিশালে দুধের উপাদানের কি পরিবর্তন আসবে?

•দুধে আমিষ এবং চর্বির শতকরা হার কমে যাবে এবং দুধ গরম করার পর সহজে ননী জমা হবে না বা পাতলা ননী জমা হবে।

৮২. গ্রামীন পরিবেশে সামান্য সময়ের দূরত্বে দুধ পরিবহনের ক্ষে্ত্রে কিভাবে দুধ সংরক্ষণ করা হয়?

•পরিষ্কার কলাপাতা বা কচুরিপানা দুধের পাত্রের উপরে ভাসিয়ে রাখতে হয়।

৮৩. চূড়ান্ত পর্যায়ে ভেজাল নির্ণয়ের জন্য কি করা হয়?

•পরীক্ষাগারে দুধের মাখন বা ফ্যাট পরীক্ষা করা হয়।

৮৪. বছরের কোন কোন ঋতুতে দুধের উৎপাদন হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়?

•প্রতিকূল আবহাওয়ায় দুধের উৎপাদন কমে। শীতের মৌসুমে দুধ উৎপাদন কমে তবে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দুধের নি:সরণ বাড়ে তবে গুণাগুণ কমে যায়। গরমের দিন গাভীকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় রাখলে বেশি দুধ উৎপাদন হয়।

৮৫. গাভী গরম হলে কি দুধ উৎপাদনের পরিবর্তন হয়?

•অস্থায়ীভাবে দুধ উৎপাদন কমে যায়। এ সময়ে (ইস্ট্রাম পিরিয়ড) দুধ উৎপাদন কমলে কোন চিন্তার কারণ নেই।

৮৬. কোন পশুর দুধে আমিষ ও চর্বি বেশি থাকে?

•মহিষের দুধে আমিষ ও চর্বি বেশি থাকে।

৮৭. কোন পশুর দুধে আমিষ ও চর্বি কম থাকে?

•গাভী ও ছাগীর দুধে।

৮৮. কোন পশুর দুধে খনিজ পদার্থ বেশি থাকে?

•ভেড়ার দুধে।

৮৯. স্বর্ণ দুধ কাকে বলে?

•গোয়ারেন্সি নামক গাভীর দুধে চর্বি বেশ থাকে এবং দুধের রঙ সোনালী দেখায় বিধায় তাকে স্বর্ণ দুধ বলে।

৯০. দুধালো গাভীর চামড়া কেমন থাকে?

•মাংস থেকে চামড়া বেশ ঝুলে থলথলে অবস্থায় থাকে এবং চামড়ায় চাকচিক্য ভাব থাকে।

৯১. দুধালো গাভীর শরীরের তাপমাত্রা এবং লোম কেমন থাকে?

•লোমের বিন্যাস সাজানো থাকে ও কানের চামড়ায় তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি থাকে।

৯২. দুধালো গাভীর গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত কেন হয়?

•গর্ভপাতের নানাবিধ কারণের মধ্যে সংক্রমিত রোগ এবং যৌনব্যাধি, বিষক্রিয়ায়, অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমে ও আরো নানাবিধ কারণে গর্ভপাত হয়ে থাকে।

৯৩. গর্ভপাতে গাভীর কি কি ক্ষতি হয়ে?

•পরবর্তীতে অনেক দেরীতে গরম হয়, দুধ উৎপাদন কমে যায় এবং চরম স্বাস্থ্যহীনতায় মারাও যেতে পারে।

৯৪. দুধালো গাভীর ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজনন কেন কার্যকর হয় না?

•যৌন রোগ, জননাঙ্গে প্রদাহ, অনিয়মিত ঋতুচক্র, পুণপুণ গরম হওয়া, হরমোনের অভাব, অধিক বয়স এবং পুষ্টির অভাবে কৃত্রিম প্রজনন কেন কার্যকর হয় না।

৯৫. কি কি কারণে দুধালো গাভী বা বকনা গর্ভবতী হয় না?

•ত্রুটিপূর্ণভাবে স্ট্র পরিবহন ও সংরক্ষণ, ত্রুটিপূর্ণভাবে ক্যান থেকে স্ট্র বের করা, সিমেন ক্যানে নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া, সিমেন ক্যানের ঢাকনার সাথে সংযুক্ত লাল সিলের ত্রুটি এবং দ্রুত ত্রুটিপূর্ণ থয়িং পদ্ধতি।

৯৬. প্রজননকারীর কি কি সমস্যায় গাভীর কৃ্ত্রিম প্রজনন বিঘ্ন হতে পারে?

•অনভিজ্ঞতা, ভুল এবং অদক্ষভাবে প্রজনন করানো, প্রজনন অঙ্গের ভিতর ভুলস্থানে সিমেন স্থাপন, গাভীর ইস্ট্রাম সম্পর্কে ভুল ধারণা, সঠিক সময়ে প্রজনন না করানো, জীবাণু দ্বারা সিমেন সংক্রমিত হওয়া, সিমেনের গুণগত মান না-থাকা, প্রজননের পর গাভীকে বিশ্রাম না-দেয়া এবং প্রজননকারীর সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।

৯৭. কৃ্ত্রিম প্রজননে সিমেনের গুণাগুণ কেমন হওয়া দরকার?

•মৃত শুক্রাণুসহ সিমেন ব্যবহার না করা, দূর্বল শুক্রাণুযুক্ত সিমেন ব্যবহার না করা, প্রয়োজনের তুলনায় সিমেনে কম শুক্রাণু থাকা এবং অণু্র্বর ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করা উচিত নয়।

৯৮. আমাদের দেশী গাভীতে কৃ্ত্রিম প্রজনন করলে কি কি সমস্যা হয়?

•দেশী গাভী আকারে ছোট বিধায় বিদেশী ষাঁড়ের বীজে প্রজনন করালে গাভীর পেটে বাচ্চা বড় আকারের হয় এবং গর্ভপাত কিংবা প্রজননের সময়ে মারা যায়।

৯৯. কৃ্ত্রিম প্রজননের ফলে উৎপাদিত বাছুরের পরিচর্যায় বিশেষ কি খেয়াল রাখতে হবে?

•দৈহিক ওজনের সাথে মিল রেখে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

১০০. গাভীর কৃ্ত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে বিশেষ কি কি সতর্কতা রাখতে হবে?

•রোগমুক্ত ও সুস্হ ষাঁড়ের বীজ মানানসই গাভীতে সঠিক সময়ে প্রজনন করাতে হবে।